মে ২৩, ২০২৫

বিডিআর বিদ্রোহের সেনা তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি

0
Hafiz_20240817_195720598

বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার সেনা তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির নতুন সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন।

শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশ থেকে তিনি এই দাবি জানান।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে গতকাল শপথ নিয়েছেন লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর… তার নেতৃত্বে একটা ইনকোয়ারি হয়েছিল বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকান্ডের ঘটনা নিয়ে। তিনি সঠিকভাবে কারণ এবং সমাধান বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে নাই। আমরা চাই, তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত যে সত্য অনুসন্ধান রিপোর্ট তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক।’
হাফিজ বলেন, ‘বিডিআর এ মেধাবী চৌকশ সেনা অফিসারদের পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল। এদেরকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের কারণে নির্মভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দেখছি এই হত্যাকাণ্ডের যে বিচার হচ্ছে দীর্ঘসূত্রিতা, ভেরি স্লো। এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত এর বিচার শেষ হবে না। অতি দ্রুত প্রয়োজন লাগলে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে যাদের যাদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে প্রত্যেককে ঝুলিয়ে দেন। তাহলে নিহতদের আত্মা শান্তি পাবে।’

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস) এর সদর দফতর পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এর মধ্যে তকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদকেও হত্যা করা হয়েছিল।
এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সেনাবাহিনী থেকে লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জমাও দিয়েছিলেন।

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার পর সে বাহিনী পুনর্গঠন করে নাম বদলে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) করা হয়।
ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গণহত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনার বিচার ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা দল এই সমাবেশ ও আলোচনা সভা করে।

সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা দলের পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হচ্ছে- শেখ হাসিনার দেশে ফিরিয়ে এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার সাথে জড়িত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিচার, ভুয়া ৫০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল, জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) বাতিল, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সকল শহীদের জাতীয় বীর ঘোষণা এবং আহতদের চিকিসার ব্যয়ভাব রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন এবং অস্বচ্ছল পরিবারকে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রদান।

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভারতকে বলতে চাই, আপনারা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন, সেজন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। লড়াই করেছেন, আমাদের পাশাপাশি যুদ্ধে করেছেন কিন্তু এদেশের প্রভু হওয়ার চেষ্টা করবেন না, জনগণের বিপক্ষ হওয়ার চেষ্টা করবেন না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে কিন্তু কোনো রকমভাবে আমাদের দেশকে, সাধারণ মানুষকে সম্পর্কে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করবেন না। সার্কের প্রত্যেকটা দেশ আপনাদের বিরুদ্ধে কেন? ছোট ছোট দেশ…. ওয়াট ইজ মালদ্বীপ, ওয়াট ইজ শ্রীলংকা। আমরা ১৮ কোটি মানুষের দেশ। আমরা চাই, বন্ধুত্ব হবে জনগনের সাথে… সুতরাং বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে বলছি, বাংলাদেশকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করবেন না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা ইতিহাসের সবচাইতে বড় ঘাতক, এহেন ঘটনা নাই করে নাই, কত মায়ের বুক যে খালি করেছে… আমরা আজকে মুক্তিযোদ্ধাদের এই সভা থেকে দাবি করব, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। ভারতকে বলব, যদি বন্ধুত্ব করতে চান, তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠান।’ এসময় তিনি শেখ হাসিনার নামের সেনানিবাস বাতিলেরও দাবি জানান।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, ফজলুর রহমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুর, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীরসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতারা বক্তব্য দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *