জুন ১৮, ২০২৫
Untitled-3

ফিচার ডেস্ক:

আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টিতে মাটির সোঁদা গন্ধ যখন বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, তখনই যেন প্রকৃতি ঘোষণা দেয়—বর্ষা এসেছে। আর এই ঋতুর সবচেয়ে মনকাড়া অলংকার হলো কদমফুল। গোলাকার, তুলতুলে, হালকা হলুদাভ শুভ্র এই ফুল যেন প্রকৃতির লেখা এক কাব্যিক চিঠি, পাঠানো হৃদয়ের ঠিকানায়।

কদমফুল শুধুমাত্র একটি ফুল নয়, এটি এক অনুভব। অনেকের শৈশব জুড়ে রয়েছে কদম গাছের স্মৃতি—স্কুলের মাঠ, পুকুরপাড় বা গ্রামীণ রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল কদম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজার অভিজ্ঞতা যেন আজও জীবন্ত। জলে ভেজা কদমের শরীর থেকে বেরিয়ে আসে এক অপার সৌরভ, যা বর্ষার বাতাসে মিশে প্রেমে ডুবিয়ে দেয় প্রকৃতি।

সাহিত্যে ও সংগীতে কদমের ছাপ
বাংলা সাহিত্য ও সংগীতে কদমের উপস্থিতি চিরন্তন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন—
“বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল / করেছ দান…”
এই কাব্যচরণে ধরা পড়ে এক গভীর প্রেম, প্রতীক্ষা ও বর্ষার আবেগ। কদম যেন সেই প্রতীক, যে নীরবে জানিয়ে দেয়—প্রিয় ফিরে আসবে, ঠিক আসবে।

কদম গাছ: ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের প্রতীক
পৌরাণিক কাহিনীতে ভগবান কৃষ্ণ কদমতলায় রাধার সঙ্গে খেলতেন বলে বিশ্বাস করা হয়। সেই থেকেই অনেক স্থানে কদম গাছকে পবিত্র ও ধর্মীয় দৃষ্টিতে দেখা হয়। কদম তাই শুধু প্রকৃতির উপাদান নয়, এটি বিশ্বাস ও সংস্কৃতিরও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ব্যবহারিক গুণেও অনন্য
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও কদম গাছের রয়েছে নানা ব্যবহারিক দিক। লোকজ চিকিৎসায় এর ছাল ও পাতা ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে, বিশেষ করে পেটের অসুখ, জ্বর ও মুখের রোগে। কদম কাঠ হালকা আসবাব ও কাগজ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। গাছটি আকারে বিশাল হলেও তার ফুল অত্যন্ত কোমল—যেন কঠোরতার ভেতরে লুকিয়ে থাকা মমতা।

নগরজীবনে হারিয়ে যাওয়া কদম
একসময় গ্রামবাংলায় সহজলভ্য হলেও এখন শহরের কংক্রিটের জঙ্গলে কদম গাছ ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। শহরাঞ্চলের পথঘাট বা খোলা প্রান্তরে কদম গাছের দেখা মেলে না বললেই চলে। যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততায় বর্ষার স্নিগ্ধ সৌন্দর্যও যেন বিলীন হতে বসেছে।

শেষ কথা
কদমফুল একেক জনের কাছে একেক অর্থবাহী—কারও কাছে শৈশবের স্মৃতি, কারও কাছে প্রথম প্রেমের চিঠি, আবার কারও কাছে এক নিঃশব্দ আশ্বাস। তবে সকলের কাছেই এটি বর্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য চিহ্ন।

বর্ষা মানেই কদমফুল। আর কদমফুল মানেই এক টুকরো ভালোবাসার গল্প।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *