নিকলী হাওর, প্রকৃতির এক শান্ত ক্যানভাস

নাজমুল মাহমুদ, কিশোরগঞ্জ থেকে ফিরে:
সময়টা ১০ মহররম, রবিবার। একটি ধর্মীয় ছুটির দিন। এই কর্মব্যস্ত শহরে একটু সময় বের করা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর। বিশেষ করে মিডিয়া কর্মী হলে তো কথাই নেই। এই ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে আমাদের সিদ্ধান্ত হয় অল্প সময়ে হলেও একটু শীতল হওয়ার জন্য কোথায় যাওয়া যায় কি না। তখন একজন সহকর্মী বলল নিকলী হাওর যাওয়া যায় কি না। তখনই সিদ্ধান্ত নিকলীতেই যাওয়া যাক। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যমুনা ফিউচার পার্ক এর সামনে থেকে রওনা হই নিকলীর উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে অনেক অনেক স্মৃতি রেখে আমরা পৌঁছলাম নিকলীতে। যার অবস্থান কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলায়। আর মূলত নিকলী উপজেলা থেকেই হাওরটির উৎপত্তি। নিকলী ছাড়াও এই হাওরের পরিধি পার্শ্ববর্তী মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার।
ভ্রমণপিপাসুদের মনের ক্লান্তি মেটানোর এক অপরূপ স্থান নিকলী হাওর। সেখানে খুঁজে পাওয়া যায় গ্রামীণ পরিবেশের ছোঁয়া। নীল আকাশের নিচে অথৈ জলরাশি, আর তার মাঝে দ্বীপের মতো গ্রাম – এ যেন প্রকৃতির এক মায়াবী ক্যানভাস। যতদূর চোখ যায় চোখে ভাসে হাওরের স্বচ্ছ জলরাশি আর সাদা তুলার মতো মেঘ। বিশাল জলরাশির মাঝে দ্বীপের মতো ভেসে আছে ছোট ছোট গ্রাম। তার মধ্যে একটি গ্রামের নাম ছাতির চর। তা যেন একটি দ্বীপরাষ্ট্র। কত মানুষ বাস করে এই দ্বীপে। বর্ষাকালে তাদের জীবীকা নির্বাহ করতে হয় মাছ ধরে। আর গ্রীস্মকালে থাকে কৃষি। এছাড়াও হাওরজুড়ে গলা ডুবিয়ে আছে ছোট জল বন।

সেই জল বনে পৌঁছতে রিজার্ভ করতে হয় নৌকা। বেশ দর কশাকষি করে ৪০০০ দিয়ে একটি মাঝারি ধরনের নৌকা রিজার্ভ করা হলো। তারপর নৌকা চরে শুরু হয় হাওর ভ্রমণ। প্রথম গন্তব্য ছতির চরের উদ্দেশ্যে। প্রায় ১ঘণ্টা ৩০ মিনিট ভ্রমণের পর পৌছি ছতিরচর। সেখানে নৌকা থমিয়ে শীতল পানির পরশ নিয়েছি আমরা। লাফালাফি, হৈ হোল্লড়, পানিতে বল খেলা আরও কত কি আনন্দ। তবে এই পানিতে লাফালাফির আনন্দে অসুস্থতার জন্য সামিল হতে পারেনি এক সহকর্মী। তবে হয়তো কিছুটা উপভোগ করেছে আমাদের ছবি তোলে।
আনন্দন শেষে আবারও আমরা নৌকায় উঠে ছুটে চলি মিঠামইন-অষ্টগ্রাম দেখার উদ্দেশ্যে। প্রায় ১ ঘণ্টা ভ্রমণের পর আমরাপ পৌছি মিঠামইন ঘাটে। তখন সময় ২ টা। একটি লাল টিনের রেস্টুরেন্ট মনোরম পরিবেশে বলে আমরা দুপুরের খাবার শেষ করি। তার রওনা করি জিরো পয়েন্টের উদ্দেশ্যে। সেখানকার সড়কের সৌন্দর্যের কথা না বললেই নয়।
কিশোরগঞ্জের হাওরগুলোর অপরূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে নতুন সংমিশ্রণ ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম এর লম্বা-সরু সুন্দর সড়কটি। দু’পাশে পানি আর মাঝ দিয়ে সুন্দর রাস্তা। আর আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘ। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে হয় আরও কিছুক্ষণ থেকে যাই। কিন্তু মনে হলো সময় খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যায়। ফিরতে হবে গন্তব্যে।
এদিকে চোখ জুড়াবে জেলেদের নৌকা ও শিশুদের সাঁতার কাটা দেখেও। লোভ সামলাতে না পেরে পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি করে ক্লান্ত শরীরকে ভিজিয়ে নিতে পারেন আপনিও।