অক্টোবর ৮, ২০২৫

টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০৯, নিখোঁজ অন্তত ১৮০

0
Untitled-4

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে আকস্মিক ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৯ জনে, যাদের মধ্যে বহু শিশু রয়েছে। এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১৮০ জন।

টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জানান, শুক্রবার ঘটে যাওয়া এই দুর্যোগের পর থেকে ১৮০ জনের কোনো সন্ধান মেলেনি। বন্যার চার দিন পার হলেও কাদাপানিতে ডুবে থাকা নদীর তীর ও জলাবদ্ধ এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। তবে নতুন করে আরও বৃষ্টিপাত ও বজ্রঝড়ের পূর্বাভাসে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে, এবং জীবিত কাউকে খুঁজে পাওয়ার আশা দিন দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কার কাউন্টি। সেখানে গুয়াদালুপে নদীর পানি ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবসের সরকারি ছুটির দিনে হঠাৎ প্রবল বর্ষণে উপচে পড়ে। একক এই কাউন্টিতেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮৭ জন— যার মধ্যে ৫৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৩১ জন শিশু। এখনও পর্যন্ত ১৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ৭ শিশুর পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয় শেরিফের দফতর।

‘ক্যাম্প মিস্টিক’ নামে একটি খ্রিস্টান গার্লস সামার ক্যাম্প নিশ্চিত করেছে, নিহতদের মধ্যে তাদের ২৭ জন শিক্ষার্থী ও কর্মী রয়েছেন। এক বিবৃতিতে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ জানায়, “এই মর্মান্তিক ঘটনার কারণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা নিহতদের পরিবারগুলোর পাশে আছি।”

জানা গেছে, ক্যাম্পের সহ-স্বত্বাধিকারী ও পরিচালক, ৭০ বছর বয়সী রিচার্ড ইস্টল্যান্ড শিশুদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজেই প্রাণ হারান। স্থানীয় পাদরি ডেল ওয়ে বিবিসিকে বলেন, “রিচার্ড ছিলেন সত্যিকারের একজন বীর। এই কমিউনিটি তাকে চিরকাল মনে রাখবে।”

এই প্রাণহানির ঘটনায় কেউ কেউ দায় দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা (NWS) এবং এর মূল সংস্থা NOAA-র কর্মী ছাঁটাই ও বাজেট সংকোচনকে। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে বাজেট সংকোচনের কারণে জরুরি সতর্কতা ব্যবস্থায় ঘাটতি থেকে থাকতে পারে।

তবে হোয়াইট হাউস এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, “এটা ছিল প্রকৃতির দুর্যোগ, প্রশাসনের কোনো গাফিলতি নেই। জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা যথাসময়ে একাধিকবার সতর্কতা জারি করেছিল।” তিনি জানান, অস্টিন-সান আন্তোনিও অফিস আগের দিন থেকেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ব্রিফ করেছিল এবং বন্যা সতর্কতা পাঠানো হয়েছিল ৪ জুলাই ভোরের আগেই।

রোববার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি সপ্তাহের শেষে টেক্সাস সফর করবেন। বাজেট সংকোচনের কারণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি বাইডেনকেও দোষ দিচ্ছি না। এটা শতাব্দীতে একবার ঘটে এমন দুর্যোগ।”

টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ বলেন, “এটি দোষারোপের সময় নয়, বরং একসাথে কাজ করার সময়।”

এদিকে, স্থানীয় অধিকারকর্মী নিকোল উইলসন কার কাউন্টিতে বন্যা সতর্কতার জন্য সাইরেন ব্যবস্থা স্থাপনের আবেদন করেছেন, যা প্রায় এক দশক ধরে আলোচনায় থাকলেও এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। টেক্সাসের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ড্যান প্যাট্রিক জানান, “এই সাইরেন ব্যবস্থা থাকলে হয়তো অনেক প্রাণ বেঁচে যেত। আগামী গ্রীষ্মে এটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।”

বন্যায় প্রাণহানির ঘটনায় শোক জানিয়েছে বিশ্ব নেতারাও। ব্রিটেনের রাজা চার্লস তৃতীয় এক শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি লিখে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং প্রাণ হারানোদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটনে ব্রিটিশ দূতাবাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *